হার্ট অ্যাটাক কে মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কসন ও বলা হয়। সাধারণত হার্টের রক্ত নালীতে চর্বি জমে রক্ত চলাচল মারাত্মকভাবে কমে যাওয়া বা রক্ত চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়াকে হার্ট অ্যাটাক বলা হয়। এ সময় হার্টের মাংসপেশি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বিভিন্ন রকম সমস্যার সৃষ্টি হয়।
যে কোনো বয়সে যে কেউ কারো হার্ট অ্যাটাক হতে পারে তবে। তবে ৫৫-৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধরা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে বেশী থাকেন। যাঁরা ধুমপান, মদ্যপান করেন, যাদের ডায়াবেটিস আছে, যারা রক্ত চাপ ও রক্তে অতিরিক্ত মাত্রায় কোলেস্টেরল জনিত সমস্যায় ভোগছেন তাঁদের ঝুঁকিও বেশী। পরিবারে কারো হার্টে রক্তনালি জনিত সমস্যা থাকলে তাদের ও হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। এছাড়াও অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ডিপ্রেশন, ঘুম না হওয়া, ব্যায়াম না করা, কিডনি সমস্যা জনিত কারনেও হার্ট অ্যাটাকের কারণ।
নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসা। বুকের মাঝখানে অথবা বাঁ পাশে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। অনেক ক্ষেত্রে বুক ভারী; বুকে চাপ; বাঁ হাত, ঘাড়, চোয়াল, বুকের পেছনে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। পেটের উপরিভাগে ব্যথা,ভমি ভমি ভাব অথবা ভমি হওয়াও অনেক ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ হতে পারে। পাশাপাশি অতিরিক্ত ঘাম, মাথা ঘোরা, মাথা ঝিমঝিম করা, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া অথবা রক্তচাপ কমে আসা জ্ঞান হারানো ইত্যাদি সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
বুকে তীব্র ব্যাথা অনুভূত হলে যতদ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতে নিয়ে যাওয়া। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ইসিজি,বুকের এক্সরে ইকোকার্ডিওগ্রাফি, রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাকের বিষয়টা নিশ্চিত হওয়া।
চিকিৎসা হিসেবে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ওষুধের মাধ্যমে রক্তজমাট ভেঙে দেওয়া হয় এবং রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। হার্টের রক্তনালির রক্ত চলাচল পুনঃপ্রতিস্থাপন করাই এর প্রধান চিকিৎসা। যত দ্রুত সম্ভাব চিকিৎসা প্রদান করা যায়, রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা তত বেশি ও দ্রুত হয়। এ ছাড়া, আধুনিক চিকিৎসা হলো অ্যানজিওগ্রামের মাধ্যমে হার্টের ব্লক শনাক্ত করা এবং তা দ্রুত অপসারণ করা এবং রক্ত চলাচল পুনঃপ্রতিস্থাপন করা। ।
হার্ট অ্যাটাক-পরবর্তী দুই ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে—স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি। হঠাৎ মৃত্যু বা হঠাৎ হার্টের রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়া বা সাডেন কার্ডিয়াক ডেথ, অনিয়মিত হার্টবিট বা হার্টবিটের সমস্যা, হার্ট ব্লক, পালমোনারি ইডেমা, কার্ডিওজনিক শক ইত্যাদি স্বল্পমেয়াদি জটিলতা। অন্যদিকে, হার্ট ফেইলিওর, অ্যারিদমিয়া, ভাল্ভের সমস্যা, কিডনি সমস্যা ইত্যাদি দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা।
অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম একটি কারণ। তাই স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন করলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব। পাশাপাশি ধূমপান ত্যাগ করা, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা, চর্বিজাতীয় খাবার পরিহার করা, নিয়মিত শরীরচর্চা করা, ফাস্ট ফুড ও জাঙ্ক ফুড পরিহার করা, যথাসম্ভব দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপমুক্ত থাকা ইত্যাদি অভ্যাসের মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ ছাড়া নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ করানো, চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক চলা এবং স্বাস্থ্যসচেতন হলে ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
হার্ট অ্যাটাক হলে একদিকে যেমন মৃত্যুঝুঁকি থাকে, অন্যদিকে চিকিৎসাও ব্যয়বহুল। তাই হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধই সর্বোচ্চ সচেতন হওয়া।